আবহাওয়া পরিবর্তনের সময় অনেকের মুখেই আলসার বা ঘা হয়। কখনও গালের ভিতরে, কখনও দাঁতের মাড়ির গোড়ায় কখনও আবার ভিতরের ঠোঁটের নীচে। বা জিভের নিচে। মুখের ভিতরের অংশে আলসার বা ঘা হলে তা খুবই বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ভুক্তভোগী ব্যাক্তিরা একমাত্র জানেন, আলসারের (Mouth Ulcer in Bengali) ব্যাথা এবং কষ্ট। খাবার তো অনেক দুরের কথা, ক’দিন জল খাওয়াও ঝকমারি কাণ্ড হয়ে দাঁড়ায়। নিজের পছন্দের কেন, কোনও খাবারই তখন মুখে তোলা দুরহ হয়ে ওঠে। কিছু খেলেই মুখের ভিতরটা জ্বলে ওঠে। ফলে সারাক্ষণ বিরক্ত মনে হতে থাকে।
নানা কারণেই এই মুখের ভিতরে ঘা বা আলসার (Mouth Ulcer in Bengali) হতে পারে। অপুষ্টি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হওয়া, দুর্বল স্বাস্থ্য, কিছু নির্দিষ্ট খাবারের কারণে এগুলি হয়। এছাড়া ভিটামিন B, B12 ও B- Complex এই ভিটামিন এর অভাবেই সাধারনত হয়।
মুখের ঘা বা আলসার আসলে কি? (What is Mouth Ulcer in Bengali)
মুখের মধ্যে আলসার বা ঘা এমনই একটি ক্ষত যা দেশের পুরো জনসংখ্যার ৪৮ শতাংশ মানুষের হয়ে থাকে। মুখের মধ্যে ঝিল্লির যে আবরণ থাকে, যাকে মিউকাস মেমব্রেন বলা হয়। তা ক্ষয়ে যাওয়ার জন্য এই ক্ষতের সৃষ্টি হয়। এই ক্ষয় অনেক কারনেই হতে পারে। এগুলি থেকে জীবন বিপন্ন বা মৃত্যু হওয়ার সুযোগ নেই। এবং এগুলি হওয়ার পিছনে বহুবিধ কারণ যেমন আছে তেমন চিকিৎসাও রয়েছে। শিশুদের সঙ্গে প্রাপ্তবয়স্করাও মুখের আলসারে কষ্ট পান, এবং এগুলি সর্বদাই যন্ত্রণাদায়ক। গালের বা ঠোঁটের ভিতরের দিকে ক্ষত দেখা দিতে পারে এবং দু’দিন থেকে এক সপ্তাহ বা তার চেয়ে বেশি দিন থাকতে পারে।
এক নজরে মুখের ঘা বা আলসার এর উপসর্গ – (Symptoms of Mouth Ulcer in Bengali)
গালের বা ঠোঁটের ভিতরের দিকে বা এমনকি জিভের নিচে মাউথ আলসার দেখা দিতে পারে। যে কোনও ব্যক্তির একই সঙ্গে একাধিক যায়গায় মাউথ আলসার বা ঘা হতে পারে। সাধারণত একটি জায়গা ফুলে ওঠে, ক্ষতের চারপাশে লাল হয়ে ওঠে। ক্ষতটির কেন্দ্রটি হলুদ বা ধূসর রঙের হয়ে থাকে।
মাউথ আলসার বা ঘা এর অত্যন্ত সাধারণ কিছু উপসর্গের মধ্যে থাকে:
১. কথা বলা বা খাওয়ার সময় ব্যাথা।
২. মুখের ভিতরে নরম লাল ক্ষত।
৩. ঠান্ডা খাবার অথবা পানীয় খেলে সাময়িক স্বস্তি বা আরাম অনুভূতি হয়।
৪. অতিরিক্ত মাত্রায় মুখে লালা নির্গত হওয়া।
৫. মুখে জ্বালার অনুভূতি।
৬. প্রদাহ।
৭. অস্বস্তিকর অনুভূতি (শিশুদের ক্ষেত্রে) ।
মুখে ব্রণ বা ব্রণ’র দাগ এর সমস্যা নিয়ে চিন্তিত আছেন? আপনার বাড়িতেই আছে সমাধান। দেখে নিন ব্রণ’র সমসধান সংক্রান্ত পোস্ট টি এখানে ক্লিক করে।।
মুখের মধ্যে আলসার বা ঘা সাধারণত কয়েকদিনের মধ্যে নিরাময় হয়। এবং চিন্তার সেরকম কোন কারন নেই। তবে, যদি নিম্নরূপ অবস্থা দেখা যায় তাহলে অবশ্যই খুব তাড়াতাড়ি চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন:
১. ক্ষতের মতো দেখা যাচ্ছে কিন্তু সেখানে কোনও যন্ত্রণা নেই।
২. ক্ষতের সঙ্গে সঙ্গে জ্বর আসছে।
৩. নতুন এলাকায় মুখের ঘা বা আলসার ছড়িয়ে যাচ্ছে।
৪. আলসারের সঙ্গে রক্তক্ষরণ হচ্ছে, ত্বকে র্যাশ দেখা দিচ্ছে, বা গিলতে অসুবিধা হচ্ছে।
৫. যে সমস্ত আলসার বা ঘা আছে সেগুলো দিন দিন আকারে বড় হয়ে যাচ্ছে।
৬. ক্ষত ২-৩ সপ্তাহের বেশি ধরে থাকছে, সাধারনত ৭-১০ দিন এর বেশি থাকে না।
মাউথ আলসার সারিয়ে তোলার কিছু ঘরোয়া প্রতিকার: (Mouth Ulcer Treatment in Bengali)
এই রোগ থেকে মুক্তির ‘মুশিকল আসান’ আপনার নাগালেই। আপনার বাড়িতেই আছে সব কিছু: –
১. জল দিয়ে গার্গল:
প্রথমে গরম জলে এক চিমটে লবণ নিয়ে গার্গল করে সঙ্গে সঙ্গে ঠান্ডা জলে গার্গল করতে পারেন। কুলকুচি ও গার্গল করুন। এতে ঘা হওয়া জায়গাটি তাড়াতাড়ি সেরে উঠবে। খাওয়ার আগে কুলকুচি করলে বেশি ফল পাবেন। এই টোটকা খুব ভালই কাজে দেবে। কয়েকবার পাল্টে পাল্টে করলে উপকার পাবেন, আরাম পাবেন।
Read More: BMI Calculator
২. ফটকিরি:
আলসারের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে হাতের কাছে থাকা ফটকিরি ব্যবহার করতে পারেন। পরিষ্কার এক টুকরো ফটকিরি জলে ভিজিয়ে নিয়ে আলসারের জায়গায় ঘষুন ১মিনিট এর মতো। দিনে দু-বার করে ফটকিরি ব্যবহার করলে নিশ্চিত উপকার পাবেন।
৩. ধনে পাতা:
ধনে পাতা গুলো জলে ফুটিয়ে সেই জল দিয়ে কুলকুচি করুন। দিনে কয়েকবার করে করলে আরাম পাবেন। এছাড়া কাচা ধনে পাতা খেতেও পারেন।
৪. টি ব্যাগ:
মুখের আলসারে টি ব্যাগ অত্যন্ত কার্যকরী ওষুধ। চা পাতার ট্যানিক অ্যাসিড আলসারের যন্ত্রণার হাত থেকে ১০০ শতাংশ মুক্তি দেয়। চা তৈরির পর টি ব্যাগটি ফেলে না-দিয়ে, ঘায়ের জায়গায় গরম গরম সেঁক দিন। এবং হালকা করে ঘষুন মিনিট কয়েক স্বস্তি পাবেন।
৫. বেকিং সোডা বা খাবার সোডা:
মুখের ভিতরের আলসার নিরাময়ের ক্ষেত্রে বেকিং সোডা বা খাবার সোডা খুব ভালো টোটকা। এক গ্লাস হালকা গরম জলে একচামচ বেকিং সোডা মিশিয়ে ভালো করে কুলকুচি করুন। দিনে বার কয়েক এ ভাবে বেকিং সোডা দিয়ে মুখ ধুলে, আলসারের হাত থেকে নিস্তার পাবেন।
৬. হলুদ:
হলুদ গুড়ো নিয়ে তাতে সামান্য মধু মিশিয়ে একটা পেস্ট করুন। সেই মিশ্রণ মুখের ভিতরে হওয়া ঘা-এ লাগান। ৩-৫ দিন পর পর করুন দেখবেন ঘা উধাও।
৭. তুলসী পাতা:
ছোট বেলা থেকেই দেখে আসছেন তুলসি পাতা তো মহৌষধ হিসেবে কাজ করে। তুলসীর পাতায় অনেক ঔষধী গুণ থাকে। মুখে ঘা হলে কয়েকটি তুলসীর পাতা চিবিয়ে নিন। তুলসী পাতার রসে ঘা সেরে যাবে।
৮. অ্যালোভেরা:
অ্যালোভেরার রস মুখের ভিতরে লাগাতে পারেন, এতে এন্টিব্যাক্টেরিয়াল গুন আছে। এতে আরাম হবে ও ঘা সেরে যাবে।
৯. টি -ট্রি অয়েল:
যে কোনও ওষুধের দোকানে আপনি টি -ট্রি অয়েল পেয়ে যাবেন। মুখের আলসার নিরাময়ে টি- ট্রি অয়েলও ভালো কাজ দেয়। একটা পাত্রের ৮০-৯০% জল নিয়ে ১০-২০% টি ট্রি অয়েল মেশান। দু-বার করে এই মিশ্রণটি দিয়ে কুলকুচি করুন। আরাম পাবেন এবং ঘাও থাকবে না ৩-৫ দিনের মধ্যে।
Read More: Side effects of Paracetamol
১০. ট্যোম্যাটো:
খাবারের সঙ্গে পাতে কাঁচা ট্যোম্যাটো খাওয়া অভ্যাস করুন, প্রতিদিন স্যালাড হিসেবে। কয়েকদিন খেলেই মুখের ভিতরের ঘা সেরে যাবে।
মুখের আলসার বা ঘায়ের ক্ষেত্রে কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহন করা আবশ্যিক- (Mouth Ulcer in Bengali)
কী কী করতে হবে?
- অবশ্যই বেশি বেশি করে জল খান।
- নির্দিষ্ট সময় অন্তর দাঁতের পরীক্ষা করান।
- দাঁত পরিষ্কার করার জন্য একটি নরম, উন্নত মানের ব্রাশ ব্যবহার করুন। দিনে দু’বার ব্রাশ করুন, সকালে এবং রাত্রিতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে।
- যেসব খাবার চিবোতে সুবিধা হয়, সেসব খাবার গুলো খাওয়ার চেষ্টা করুন।
- অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যেমন ভাইটামিন এ, সি এবং ই সমৃদ্ধ খাবার। এবং ভিটামিন B, B12 এবং B-কমপ্লেক্স জাতীয় খাবার। উদাহরণস্বরূপ অন্যান্য খাবারের সঙ্গে সাইট্রাস ফল, পেঁপে, আম, গাজর, লেবু, পেয়ারা, কাঠবাদাম, আমলকী খান।
কী কী করা চলবে না?
- মদ্যপান বা ধূমপান বন্ধ করুন।
- খুব গরম পানীয় খাওয়া।
- মুখের আলসার টিপে পুঁজ বার করার চেষ্টা।
- মশলাদার, টক বা অম্লজাতীয় (অ্যাসিডিক) খাবার খাওয়া।
- বারবার মুখের ক্ষতে হাত দেওয়া।
- সোডা জাতীয় খাবার খাওয়া থেকে দূরে থাকুন।
- বেশি মাত্রায় চকোলেট এবং বাদাম খাওয়া এবং দিনের মধ্যে বারবার কফি পান করা।
Source: Google, Wikipedia, and WHO
==========
Thanks for reading this article. If you have any information related to this article and blog, you can comment or visit the contact us page.
You can also visit the Competitive Exams-related Blog: Learn For Exam
==========